ঈদযাত্রায় বাংলাদেশ রেলওয়ের বিশেষ ট্রেন কমানো নিয়ে যাত্রীদের উদ্বেগ

দেশজুড়ে মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য পরিবারের কাছে ফিরতে উদগ্রীব। যাত্রীদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশ রেলওয়ে নির্ভরযোগ্য ও আরামদায়ক ভ্রমণের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন, যার ফলে ঈদের সময় ট্রেনের টিকিটের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

এই বাড়তি চাপ সামলাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতি বছর বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করে। তবে এবার বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমানোর কারণ কী?

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ২০টি বিশেষ ট্রেন (১০ জোড়া) চলাচল করেছিল, কিন্তু এবার মাত্র ১০টি (৫ জোড়া) ট্রেন চালানো হবে। এমনকি, একটি রুটে ট্রেনের সংখ্যা কমানো হয়েছে, এবং চারটি রুটে কোনো বিশেষ ট্রেন চালানো হবে না।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশেষ ট্রেনের চাহিদা কমে গেছে, পাশাপাশি ইঞ্জিন ও কোচের সংকট রয়েছে। যদিও ঈদযাত্রায় ট্রেনের চাহিদা অত্যধিক বেড়ে যায়, তবুও তারা মনে করেন যে কম সংখ্যক ট্রেন দিয়েও যাত্রীরা খুব বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।

ঈদে টিকিট বিক্রির সময়সূচি ও অনলাইন বুকিং

১৪ মার্চ থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে, যেখানে প্রথম দিন ২৪ মার্চের টিকিট পাওয়া যাবে। এই বিক্রি ২০ মার্চ পর্যন্ত চলবে।

• টিকিট কাটার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে যাত্রীরা ঘরে বসেই অনলাইন ট্রেনের টিকিটs কিনতে পারেন।
• ফেরার টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৪ মার্চ থেকে, যা ৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
• পশ্চিমাঞ্চল রুটের টিকিট সকাল ৮টা থেকে বিক্রি শুরু হবে।
• পূর্বাঞ্চল রুটের ইন্টারসিটি ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে দুপুর ২টা থেকে।

এবার ট্রেনের টিকিট শুধুমাত্র অনলাইনে কেনা যাবে, কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করা হবে না। ফলে অনলাইন ট্রেনের টিকিট সিস্টেমে প্রচণ্ড চাপ পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কোন কোন রুটে ট্রেন কমানো হয়েছে?

এবার চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমানো হয়েছে। আগে যেখানে দুটি ট্রেন চলত, এবার সেখানে মাত্র একটি ট্রেন চালানো হবে।

এছাড়া, চারটি রুটে কোনো বিশেষ ট্রেন চালানো হবে না:

1. পার্বতীপুর-দিনাজপুর
2. ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর
3. চট্টগ্রাম-কক্সবাজার
4. চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ

চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য বড় ধাক্কা

চট্টগ্রাম দেশের অন্যতম প্রধান বন্দর ও শিল্পনগরী হওয়ায় এখানে বিশালসংখ্যক মানুষ কাজ করেন, যারা ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি ফিরতে চান। বাংলাদেশ রেলওয়ে সবসময়ই চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য অন্যতম প্রধান ভরসা, কারণ এখানে বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ অনলাইন ট্রেনের টিকিটs কিনে ট্রেনে যাত্রা করতে পছন্দ করেন, যাতে তারা অতিরিক্ত বাসভাড়া ও যানজট এড়াতে পারেন।

তবে এবার চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ঈদযাত্রার ভিড় আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে ট্রেনের সংখ্যা কমানোর ফলে।

রেলওয়ের যুক্তি ও বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন কমানো হয়নি, বরং পূর্বের বিশেষ ট্রেনকে নিয়মিত ট্রেন হিসেবে চালু করা হয়েছে, যা দিনে দুইবার চলাচল করবে।

এছাড়া, চাঁদপুর রুটে দুই জোড়া বিশেষ ট্রেন ছিল, কিন্তু যাত্রী সংখ্যা কম থাকায় এবার শুধুমাত্র একটি জোড়া ট্রেন চালানো হবে।

তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, ইঞ্জিন সংকটের কারণ দেখিয়ে বিশেষ ট্রেন বন্ধ করাটা যৌক্তিক নয়।

সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি দিলওয়ার মাজুমদার বলেন,
“বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে অনেক মানুষ সড়কের তুলনায় ট্রেনকে বেশি নিরাপদ মনে করছে। এছাড়া, ঈদের সময় সড়কে বিশৃঙ্খলা, যানজট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা দেখা যায়। ফলে, ট্রেনে যাত্রীদের সংখ্যা আরও বাড়বে, আর এমন সময় বিশেষ ট্রেন কমানো দুর্ভাগ্যজনক।”

সমস্যা এড়াতে যাত্রীদের করণীয়

• অনলাইন ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রস্তুতি নিন।
• টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই চেষ্টা করুন টিকিট বুক করতে।
• অনলাইনে টিকিট কাটার সময় ভালো ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করুন।
• স্টেশনে অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলুন ও প্রয়োজন ছাড়া কাউন্টারে ভিড় করবেন না।
• ট্রেনের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই স্টেশনে পৌঁছে যান।

শেষ কথা

এবারের ঈদযাত্রায় বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে ফেলায় যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, চট্টগ্রামের যাত্রীরা বেশি সমস্যায় পড়তে পারেন, কারণ সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি ট্রেন ব্যবহার করেন।

যাত্রীরা যদি অনলাইন ট্রেনের টিকিট ব্যবস্থার মাধ্যমে আগে থেকেই টিকিট সংগ্রহ করেন এবং পরিকল্পিতভাবে যাত্রা করেন, তাহলে কিছুটা হলেও চাপ কমবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট এড়াতে রেলওয়েকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আপনার টিকিট কেটে নিন, নিরাপদে যাত্রা করুন, এবং ঈদ উপভোগ করুন!