ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ তাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাত্রা যাতে সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়, সে জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ঘোষণা দিয়েছে যে, ১৪ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত অগ্রিম ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে।
এই বছর টিকিট শুধুমাত্র অনলাইনে বিক্রি করা হবে এবং কাউন্টারে কোনো টিকিট পাওয়া যাবে না। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্টেশনে অতিরিক্ত ভিড় ও বিশৃঙ্খলা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, যাত্রীদের চাপ সামলাতে বিশেষ ঈদ ট্রেন, অতিরিক্ত কোচ এবং অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।
অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময়সূচি ও অনলাইন বুকিং ব্যবস্থা
বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যাত্রীরা ২৪ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত যাত্রার জন্য অগ্রিম টিকিট কিনতে পারবেন। এ বছর প্রতিদিন ৩৫,৩১৫টি টিকিট বিক্রি করা হবে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
টিকিট বিক্রির সময়সূচি:
- ১৪ মার্চ: ২৪ মার্চের টিকিট
- ১৫ মার্চ: ২৫ মার্চের টিকিট
- ১৬ মার্চ: ২৬ মার্চের টিকিট
- ১৭ মার্চ: ২৭ মার্চের টিকিট
- ১৮ মার্চ: ২৮ মার্চের টিকিট
- ১৯ মার্চ: ২৯ মার্চের টিকিট
- ২০ মার্চ: ৩০ মার্চের টিকিট
টিকিট কাটার নিয়ম:
- যাত্রীরা শুধুমাত্র অনলাইনে নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
- স্টেশনের কাউন্টারে কোনো টিকিট বিক্রি হবে না।
- কালোবাজারি ও অতিরিক্ত ভিড় রোধ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ সংযোজন
ঈদে যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামলাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৫ জোড়া বিশেষ ঈদ ট্রেন চালু করবে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী আরও বিশেষ ট্রেন সংযোজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
অতিরিক্ত কোচ:
৩৬টি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে ট্রেনের ধারণক্ষমতা বাড়াতে।
এসব কোচ পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করা হবে।
প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত ইঞ্জিন সংযোজনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
ঈদযাত্রার আনুষ্ঠানিক শুরু:
২৪ মার্চ থেকে ঈদযাত্রীদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে যে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যময় ও নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ের প্রস্তুতি ও বৈঠক
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক:
সর্বশেষ বৈঠকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি, ট্রেন পরিচালনা এবং ঈদযাত্রার যাত্রী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়।
৯ মার্চ আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা ও অন্যান্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাস:
মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে বাস পরিষেবার প্রস্তুতি
শুধু ট্রেন নয়, বাস সার্ভিসেও ঈদযাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাস সার্ভিসের প্রধান সিদ্ধান্ত:
বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলো মার্চের মাঝামাঝি থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করবে।
BRTC’র ঈদ স্পেশাল বাস সার্ভিস ২০ মার্চ থেকে চালু হবে।
মূল সমস্যা:
বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির তারিখ সরকার নির্ধারণ করে না, তাই বেসরকারি কোম্পানিগুলো নিজেদের সুবিধামতো দাম নির্ধারণ করে।
অনেক অসাধু বাস কোম্পানি ঈদের আগে বাড়তি ভাড়া আদায় করে।
সমাধান:
কিছু বড় বাস কোম্পানি অনলাইন টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা চালু করেছে, যাতে যাত্রীরা সহজেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন।
যাত্রীদের প্রধান উদ্বেগ ও সমস্যা
যদিও রেলওয়ে ও বাস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু যাত্রীদের মধ্যে কিছু উদ্বেগ এখনও রয়েছে:
অনলাইনে টিকিট কেনার সমস্যা:
- টিকিট কাটার সময় ওয়েবসাইট ক্র্যাশ হওয়া বা পেমেন্টের পর টিকিট না পাওয়া।
কালোবাজারি ও দালাল চক্র:
- কিছু অসাধু ব্যক্তি আগেভাগে টিকিট কিনে বেশি দামে বিক্রি করে।
- রেল কর্তৃপক্ষ এবার কড়া নজরদারির আশ্বাস দিয়েছে।
স্টেশন ও টার্মিনালে অতিরিক্ত ভিড়:
- অনলাইনে টিকিট বিক্রি হলেও অনেকেই তথ্য নিতে স্টেশনে আসেন, ফলে অপ্রয়োজনীয় ভিড় বেড়ে যায়।
সমাধান:
- কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার কড়া নজরদারি রাখা হবে যাতে কেউ অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করতে না পারে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
- আগেভাগে টিকিট কেটে রাখুন, শেষ মুহূর্তে ঝামেলা এড়ান।
- বিশ্বস্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন টিকিট কেনার জন্য।
- অনলাইনে টিকিট কাটার সময় ভালো ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করুন।
- যাত্রার দিন পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে স্টেশনে পৌঁছান।
- স্টেশনে অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়িয়ে চলুন।
শেষ কথা
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও সড়ক পরিবহন বিভাগ এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। বিশেষ ট্রেন, অতিরিক্ত কোচ ও অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
যাত্রীরা যদি পরিকল্পিতভাবে টিকিট সংগ্রহ করেন এবং ভ্রমণের আগে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেন, তাহলে এবারের ঈদযাত্রা আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।